এস এ আখঞ্জী ,তাহিরপুর প্রতিনিধি: উজান থেকে নেমে আসা চেরাপুঞ্জির ঢল আর টানা ভারী বর্ষনের জলে, দু-য়ে মিলে বসত ঘরে জল। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সবগুলো হাওর পানিতে একাকার। কচুরিপানার মতো ভেসে আছে হাওরপারের গ্রামগুলো। উপজেলার নব্বইভাগ বসত ঘর দোকানপাটের ভেতর জল।অন্যদিকে আফাল ঢেউয়ের তান্ডবে খান খান করেছে অধিকাংশ গ্রামের বসতভিটা, ভাসমান বাজারে নিত্য পণ্য জিনিস গুলো অধিক মূল্য দিয়েও মিলছে না। গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ২ লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে, নিঃস্ব এখন বন্যায়। দুর্যোগ কেন্দ্রে চলে গেছে পরিবার পরিজন নিয়ে । বন্যার পরিস্থিতি উন্নতি হলেও, খাবার দাবার , বিশুদ্ধ পানি, টয়লেট আয় রোজগার সব বঞ্চিত হয়ে, বিট ভাঙ্গা কাঁদা জলে বান বাসী চরম দুর্গতিতে।
আজ ২০ জুন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার শ্রীপুর বাজার, নতুন বাজার, তরং শিবরামপুর মন্দিয়াতা, জয়পুর ,গোলাবাড়ি, জামালপুর ,নবাবপুর, মদনপুর, ভোরাঘাটসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বান বাসীদের দুর্ভোগের চিত্র, শুনা যায় আর্তনাদের কাহিনী। এযে দুর্যোগ নয়, প্রলয়ের স্তুপ। বসত বিটা ভাঙ্গা, নলকূপ, টয়লেট,রান্না করার চুলা, পানির নিচে, সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। ধান, আসবাস পত্র হাড়িয়ে দিশেহারা বানবাসী মানুষ।
দিনমজুর অর্ধহারে, অনাহারে দিন যাপন। দুর্যোগকেন্দ্রে বসবাস এ যে করুণ কাহিনী।
উপজেলার হাওর পাড়ের সামছু মিয়া বলেন, চোখের সামনে পলকেই বিলীন হয়ে গেছে, বসত বিটা, কষ্টার্জিত ধানের ঘোলা, গবাদিপশুর কের কোটাসহ আসবাসপত্র খানা হাড়িয়ে আমি নিঃস্ব ।
শ্রীপুর বাজারের চাউল ব্যবসায়ী সুশান্ত পাল বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী একার উপর সংসার, যা আয় হয়, তা দিয়ে চলে সংসার, বন্যার জলে ২৫ বস্তা চাউল তলিয়ে যাওয়ায় আমি নিঃস্ব। এনজিও থেকে লোন এনে ব্যবসা শুরু করেছিলাম, এর পূর্বেও ঋন গ্রস্ত হয়ে পড়ে ছিলাম, অন্য কোন কর্ম না জানায়, লোন এনে শুরু করেছি আবার , এই দুর্যোগে সবেই গেল আমার।
তাহিরপুর উপজেলার, ১নং উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন ছাত্র কল্যান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র ওয়ালি উর আখঞ্জী বলেন , ভাটির জনপদের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই, ঘা শুকাতে, না শুকাইতে আবার আঘাত, এ যেন কাটা গায়ে নুনের ছিটা। বিগত দিনে ফসল হানির চিন্তা দূর হয়ে বিটে মাটি বাঁধেনি, আবার প্লাবিত বন্যায় নীড় ভেঙে, ডানা ভাঙ্গা পাখির মত দিশেহারা, জন জীবন অস্থির।এই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন এর পাশে, বিত্তবানদের দাড়ানো মানবিক দায়িত্ব ।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউ/পি সদস্য আকসান আখঞ্জী জানান, এবারের এটা বন্যা নয়, মনে হয় গজব। আমার ওয়ার্ডের ৪শত পরিবারের বিটে মাটিসহ গবাদিপশুর কের কোটা সব মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার মালমাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব পরিবার দিশেহারা।
আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা লাগবে সুব্যবস্তা করেন।
উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন, এবারের বন্যা, এক ভয়াবহ বন্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি, জন জীবন আজ অস্থির, আমার ইউনিয়ন বাসী সব থেকে বেশী ক্ষতি গ্রস্ত, এক করুণ দশায় , বসত বাড়ি আসবাসপত্রসহ, গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ প্রায় ৫০ কোটি টাকা ।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পঃপঃ কর্মকর্তা ডাক্তার মির্জা রিয়াদ হাসান বলেন, প্লাবিত বন্যায়, পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে, ৫০হাজার বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেটসহ এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে উপজেলার সব কয়েকটি ইউনিয়নে।দক্ষিণ শ্রীপুর বাদাঘাট ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি সব কয়টায় বিতরণ করা হবে।
তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বার বার হানা দিয়ে জনজীবনকে অস্থির করে তুলছে, পানিবন্দি মানুষ বিপাকে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে, পানিবন্দি মানুষদের জন্য রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার, ও বিশুদ্ধ পানিও দিচ্ছি প্রতিটি মানুষের কাছে।
এবিনিউজ টুয়েন্টিফোর বিডিডটকম//এফ//