আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মধ্যেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে জার্মানি। ইউরোপের দেশ জার্মানি আশঙ্কা করছে, রাশিয়া খুব শিগগিরই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে পারে। এ কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাতের প্রস্তুতিও নিচ্ছে দেশটি। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া কিছু নথির বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে জার্মান সংবাদপত্র বিল্ড।
বিল্ডের বরাতে নিউ ইয়র্ক পোস্ট এক প্রতিবেদনে বলছে, জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে একটি শ্রেণিবদ্ধ সামরিক তথ্য পেয়েছে তারা। যেখানে বলা হয়েছে, জার্মান সশস্ত্র বাহিনী পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার ‘হাইব্রিড’ আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আগামী বছর রাশিয়া সামরিক জোট ন্যাটোর মিত্র দেশগুলোতে আক্রমণ করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ আরও প্রসারিত করতে পারে। আর এর মাধ্যমেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করছে জার্মানি। তবে রুশ কর্মকর্তারা বিল্ডের এই প্রতিবেদনটি ‘ভুয়া’ বলে দাবি করেছেন এবং এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিল্ডের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র বাহিনী রাশিয়ার আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এর মধ্যে সাইবার হামলাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
সংবাদপত্রটি আরও বলছে, আসছে বসন্তে ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। এর পর ধাপে ধাপে কীভাবে রুশ বাহিনী এগিয়ে যাবে ও কীভাবে ন্যাটো তার মিত্রদের রক্ষা করবে সেটিও ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে।
গোপন এই নথি অনুসারে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়বে। আর ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চাল ও বেলারুশে বড় আকারের সামরিক মহড়া শুরু করতে প্ররোচিত করবে। এই মহড়ায় প্রায় ৫০ হাজার রুশ সৈন্য অংশ নিতে পারে।
তারপরে রাশিয়া ন্যাটোর উপর আক্রমণের সতর্কবার্তা দিয়ে লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডে বোমাবর্ষণ করতে পারে। এই হামলার চূড়ান্ত লক্ষ্য হবে ‘সুওয়ালকি গ্যাপ’ নামে পরিচিত একটি এলাকা জয় করা।
সুওয়ালকি গ্যাপ একটি সংকীর্ণ পোলিশ-লিথুয়ানিয়ান করিডোর যা বেলারুশ ও রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ প্রদেশের মধ্যে অবস্থিত। নথি অনুসারে, সংঘাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালিনিনগ্রাদে হাজার হাজার সৈন্য ও মধ্য-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে পারে।
ফাঁস হওয়া নথিতে আরও বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে মিত্রদের সহযোগিতার জন্য ৩০ হাজার জার্মান সেনা যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হবে। অন্যদিকে, একই সমেয়ে আনুমানিক ৭০ হাজার রুশ সৈন্য বেলারুশে জড়ো হবে।
বিল্ড আরও বলেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নিজেদের মিথ্যা প্রচারণা ও সহিংসতা আরও বাড়াতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া। যদিও পুতিন ও রুশ কর্মকর্তারা বারবার বলে আসছেন যে, ইউক্রেন ছাড়া তারা আর কোনো দেশের সঙ্গে সংঘাতে সৃষ্টি করবে না।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর রাশিয়া পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ করতে পারে, যা তিনি ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে বেলারুশ ও বাল্টিক অঞ্চলে সৈন্য সমাবেশের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
ফাঁস হওয়া নথিতে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষার জন্য ৩০,০০০ জার্মান সৈন্য মোতায়েন করা হবে এবং আনুমানিক ৭০,০০০ রাশিয়ান বাহিনী বেলারুশে জড়ো হবে। ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে ন্যাটোকে আরও রুশ আগ্রাসন রোধে "বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধের ব্যবস্থা" প্রণয়ন করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, যা পশ্চিমা সৈন্য এবং রাশিয়ান বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হিসাবেই দেখা হয়।
গত সপ্তাহে ন্যাটোর আমন্ত্রিত সুইডেনের বেসামরিক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্ল-অস্কার বোহলিন সুইডেনে 'পিপল অ্যান্ড ডিফেন্স' সম্মেলনে বলেছিলেন, যুদ্ধ সম্ভব। দেশটির সামরিক কমান্ডার-ইন-চিফ মাইকেল বাইডেন বলেন, 'আমাদের যতটা সম্ভব, সব স্তরে, সমাজজুড়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।
এবিনিউজ টুয়েন্টিফোর বিডিডটকম//এফ/