চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে হবে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার জন্য যাবতীয় শ্রম ও খরচ অর্থবহ। আমি যেদিন শপথ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে প্রথম বক্তব্য রাখলাম, সেদিন আমাকে বলা হলো, সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার মতো দেনা আছে। প্রতি মাসে সিটি কর্পোরেশনের খরচ হয় প্রায় ৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ কোটি টাকা শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভর্তুকি দিতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজ মিলিয়ে প্রায় ১০০টির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। আমি তখন আমার বক্তব্যে বলেছিলাম, শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। আজকে আমি শিক্ষার মাধ্যমে যদি একটি আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি, আমি মনে করি না যে, সেটা আমার ভর্তুকি। এটা আমার সম্পদ। এরা একদিন জাতিকে পথ দেখাবে, আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে জাতির জন্য।
তিনি উল্লেখ করেছেন, আমি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আজকে হয়তবা ডাক্তার হয়েছি। আজকে আমি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হয়েছি। কিন্তু আমি যদি একটা গরিব রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে না পারি, তাহলে আমার সেই শিক্ষার কোনো দাম থাকবে না। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে ল’ ফ্যাকাল্টি আছে। এই ফ্যাকাল্টি থেকে অনেক আইনজীবী বেরিয়েছে। গত ১৬টি বছর আইনজীবীদের সাথে আমাদের একটা অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বিভিন্ন গায়েবি মামলার কারণে। সেই প্রেক্ষাপটে বলছি, আইনজীবী হিসেবে একটা অসহায় মানুষের পাশে যদি আমি দাঁড়াতে না পারি, আমি যদি বিনামূল্যে তার জামিনটা করে দিতে না পারি, সেক্ষেত্রে আমার শিক্ষার কোনো দাম থাকবে না। এটাই আমি বোঝাতে চাইছি। এজন্য দরকার মোরাল এডুকেশন বা নৈতিক শিক্ষা। আমি মোরাল শিক্ষায় যদি শিক্ষিত হতে না পারি, আমার পুঁথিগত বিদ্যা দিয়ে দিনশেষে কোনো লাভ হবে না।
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ, আইন বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ ও ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হিম উৎসব ও কাওয়ালী সন্ধ্যা-২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন এসব কথা বলেন। ২২ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার, সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনেই ছিল। কিন্তু এরপর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কোনো এক ব্যক্তির নামে সেটা চলে যায়। এটা যাতে ভবিষ্যতে আর না হয়, এটা যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ করতে না পারে, এজন্য আমার মূলচিন্তা হচ্ছে, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিকে একটা ভালো জায়গায় স্থাপন করা হবে। এই লক্ষ্যে আমি কাজ করছি। আমাদের অনেক টাকা জমা আছে। এই টাকা শুধুমাত্র প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির জন্যই খরচ করা হবে। অন্য কোনো খাতে এই টাকা যাবে না। তিনি আরও বলেন, আজকে যে-অনুষ্ঠান হচ্ছে, এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলো খুবই দরকার। স্পোর্টস, কালচারাল এক্টিভিটিস, লিটারেচার, স্যোশাল এক্টিভিটিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইগুলো না থাকলে একজন শিক্ষার্থী পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারে না।
সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সাহীদ মো. আসিফ ইকবালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইফতেখার মনির, বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান তানজিনা আলম চৌধুরী ও ইইই বিভাগের চেয়ারম্যান জনাব টুটন চন্দ্র মল্লিক। সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল হক, ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাচুর্য দেবী ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফজল আল মাহমুদ অয়নের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইফতেখার মনির বলেন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে আমরা শুধু শ্রেণিকক্ষের পাঠদানেই সীমাবদ্ধ থাকি না। সহ পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমও আমরা শিক্ষার্থীদের দিয়ে করাই। আজকের অনুষ্ঠান এই কার্যক্রমেরই অংশ। এভাবে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি একদিন বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দৃশ্যমান হবে। তিনি আরও বলেন, চারটি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা সুনিপুণভাবে এই উৎসবটি সম্পন্ন করছে। মাননীয় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এই অনুষ্ঠানে আগমন করায় আমি তাঁকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তানজিনা আলম চৌধুরী ও টুটন চন্দ্র মল্লিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, অল্পসময়ের মধ্যে এতবড় অনুষ্ঠান আয়োজন করে তোমরা প্রমাণ করেছো, তোমরা পার। আশা করি, তোমরা শৃঙ্খলার সঙ্গে তোমাদের অধ্যয়ন শেষ করবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. সাহীদ মো. আসিফ ইকবাল প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন ও গবেষণার অগ্রগতিতে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রায় অর্ধশত স্টল ছিল। স্টলগুলোতে বহু রকমের পিঠা ও খাবারের প্রদর্শনী ছিল। কোনো কোনো স্টলে পিঠা ও খাবারের পাশাপাশি প্রসাধনী ও গহনা প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ, আইন বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ ও ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এবিনিউজ টুয়েন্টিফোর বিডিডটকম//এফ //