সদ্য সংবাদ :
জাতীয়

বিনা প্রশ্নে পাচারের অর্থ দেশে আনার সুযোগ অনৈতিক-বেআইনি: টিআইবি

Published : Friday, 10 June, 2022 at 8:46 PM
স্টাফ রিপোর্টার: করোনা সংক্রমণ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা, সরকারি ব্যয় সংকুলান এবং বেসরকারি খাতকে চাঙ্গা করার যুক্তিতে দেশ থেকে পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার সুযোগ দেবে সরকার। আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুযোগ রেখে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। তার এই প্রস্তাবকে অনৈতিক ও বেআইনি আখ্যা দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তাদের মতে, এই সুযোগ অসাংবিধানিক, সংশ্লিষ্ট আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বৈষম্যমূলক এবং অর্থ পাচারের মতো ঘৃণিত অপরাধের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার নামান্তর। একইসঙ্গে এই প্রস্তাব বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটি।

শুক্রবার (১০ জুন) এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।


বিবৃতিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থমন্ত্রী যেভাবেই ব্যাখ্যা করেন না কেন- নামমাত্র কর দিয়ে প্রশ্নহীনভাবে পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে আনার সুযোগ স্পষ্টতই অর্থ পাচারকারীদের অনৈতিক সুরক্ষা ও পুরস্কার প্রদান। অথচ অর্থপাচার রোধ আইন ২০১২ এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অর্থপাচার গুরুতর অপরাধ। দেশের আইন অনুযায়ী যার শাস্তি পাচারকৃত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা এবং তার দ্বিগুণ জরিমানা ও ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। (পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার) এই সুযোগ অর্থ পাচার তথা সার্বিকভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। যা সংবিধান পরিপন্থি এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’ ঘোষণার অবমাননা। অন্যদিকে, যারা বৈধ উপার্জননির্ভর করদাতা তাদের জন্য এই প্রস্তাব প্রকটভাবে বৈষম্যমূলক। কারণ তারা ৭ শতাংশের কমপক্ষে তিনগুণ হারে কর দিয়ে থাকেন। এটি বৈষম্য ও সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থি। অবিলম্বে এ সুযোগ বাতিল করতে হবে এবং অর্থপাচারকারীদের জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য যে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইনি প্রক্রিয়া নির্ধারিত রয়েছে তা অনুসরণ করে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার সুযোগ প্রদান বিগত বছরগুলোর মতোই কালো টাকা সাদা করার বেআইনি ও অন্যায় সুযোগের ধারাবাহিকতা মাত্র। যা স্থানিক থেকে বৈশ্বিক করা হলো- এমন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এতে বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ দেশের অর্থনীতির মূলধারায় সংযুক্তির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ও আয়কর রাজস্ব বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বারবার সুযোগ দিয়েও দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাশিত ফল বয়ে আনেনি, সরকারও আকাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পায়নি। তাই নতুন এই বিশেষ বিধানের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে তা না বললেও চলে। কারণ যারা অর্থ পাচার করেছেন তারা এ ধরনের প্রণোদনায় উৎসাহিত হয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত নিয়ে আসবে, এরকম দিবাস্বপ্নের কোনো ভিত্তি নেই। বিশেষ করে, যেখানে পাচারকৃত দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের দেশের পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি ছাড়া এই অর্থ বা সম্পদ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। বরং এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীরাই শুধু স্বস্তি বোধ করবেন, পুলকিত হবেন। অর্থপাচারকে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া হলে দেশে দুর্নীতি ও অর্থপাচার আরও বিস্তৃতি ও গভীরতা লাভ করবে। এই আত্মঘাতী পথ থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আমদানি মূল্যস্ফীতির চাপ, ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখা, আমদনি ব্যয় বেড়ে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকার মতো বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটগুলোকে স্বীকার করলেও এগুলো মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল বা পথ নির্দেশিকা দিতে পারেননি। প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে আরও বড় করার প্রত্যাশা থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার তেমন কোনো নিদর্শন দেখা যায়নি। বরং সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয়কে বড় করে দেখাতে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ, করোনার অভিঘাত উত্তরণে দেওয়া ঋণের সুদ মওকুফকে অন্তর্ভুক্ত করে দেখানো হয়েছে, যেগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশই নয়!

এমন বাস্তবতায় উল্লিখিত চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল নির্ধারণে বাস্তবসম্মত ও নিরপেক্ষ দিক নির্দেশনার জন্য আলোচনা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সুখ্যাতি সম্পন্ন বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। এর মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটকে ঢেলে সাজানো উচিত বলে মনে করে সংস্থাটি।






এবিনিউজ টুয়েন্টিফোর বিডিডটকম//এফ//









জাতীয় পাতার আরও খবর


  • সম্পাদক: শাহীন চৌধুরী
    উপদেষ্টা সম্পাদক: হেলেনা বিলকিস চৌধুরী, নির্বাহী সম্পাদক: বরুণ ভৌমিক নয়ন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: সৈয়দ আফজাল বাকের, ঢাকা অফিস: ২/১ হুমায়ুন রোড (কলেজ গেট) মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭ ফোন: ৮৮-০২-৪৮১১৯৪৯৫, হটলাইন: ০১৭১১-৫৮৩৬২৩, ০১৭১৭-০৯৮৪২৮, চট্টগ্রাম অফিস- আবাসিক সম্পাদক: জাহিদুল করিম কচি, নাসিমন ভবন (দ্বিতীয় তলা) ১২১, নূর আহমেদ রোড, চট্টগ্রাম ফোন: ০৩১-২৫৫৭৫৪২ হটলাইন: ০১৭১১-৩০৭১৭১, E-mail : abnews13@gmail.com, Web : www.abnews24bd.com, Developed by i2soft Technology Ltd.
    Close